সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নিজেদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য একদল মানুষের যৌথ উদ্যোগকে সমবায় বলা হয়। গ্রামবাসীর এবং এলাকার সার্বিক উন্নয়নে সমবায় কর্মসূচির ভালো দিক জনগনের সামনে তুলে ধরা ও সমবায় কর্মসূচিতে জনগনের আগ্রহ সৃষ্টি করা ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব। জনগন ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সমবায় সমিতি গঠন সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ সেবা পাওয়ার অধিকার রয়েছে।
সমবায় আমরা কেন করবো?
সমবায় শুধুমাত্র একটি অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নয়। সমবায়ের মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’’। সমবায় সংগঠন বা সমিতি সমবায় সংগঠন ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও শক্তিকে এক করার মাধ্যমে দেশের দরিদ্র মানুষের কাজের সুযোগ তৈরি করে।
সমবায় নীতিমালা
বাংলাদেশের কোন সমবায় সংগঠন সাধারণত সাতটি নীতিমালা অনুসরণ করে:
- ১. স্বতঃস্ফূর্ত এবং অবাধ সদস্যপদ
- ২. সদস্যের গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ
- ৩. সদস্যের আর্থিক অংশগ্রহণ
- ৪. স্বায়ত্বশাসন ও স্বাধীনতা
- ৫. শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং তথ্য
- ৬. আন্তঃসমবায় সহযোগিতা
- ৭. সামাজিক অঙ্গীকার
সমবায় সংক্রামত্ম ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব
গ্রাম উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ সমবায় সংক্রামত্ম যে সব দায়িত্ব পালন করে তা হল-
- ১. স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ৩৮ (জি) ধারা অনুযায়ী ইউনিয়ন পরিষদে কুটির শিল্প এবং সমবায় বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি গঠন করা হয়।
- ২.স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশ ১৯৮৩ এর ৩০ ধারার অধীন প্রথম তফসীলে উল্লেখিত ৩০নং দায়িত্ব অনুযায়ী সমবায় সমিতি গঠনে জনগণকে উদ্বুদ্ধকরণ এবং সমবায় কার্যক্রম সম্প্রসারণে সহায়তা করে ইউনিয়ন পরিষদ।
- ৩. ইউনিয়ন পরিষদ এলাকার সকল প্রাপ্তবয়স্ক লোকদেরকে সংশ্লিষ্ট সমিতির সদস্য হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করে। সদস্যদের শেয়ার ও আমানত দ্বারা পুঁজি সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণ এবং সমিতির কাজকর্মে সদস্যদের সহযোগিতা ও অংশগ্রহণকে জোরদার করার জন্য সম্প্রসারণ ও শিক্ষা কর্মসূচির আয়োজন করে। এসব ব্যবস্থা নেওয়ার আগে প্রত্যেক সমিতির বাসত্মব সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় কর্মসূচি গ্রহণ করে। কোন এলাকার জন্য প্রয়োজন হলে নতুন সমিতি গঠন অথবা একাধিক সমিতিকে সংযুক্ত করে।
- ৪. ইউনিয়ন পরিষদ প্রত্যেক সমিতির সদস্যদের সহযোগিতায় একটি অর্থনৈতিক উন্নয়নসূচি এবং একটি সমাজ কল্যাণ মূলক কর্মসূচি তৈরি করে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। অর্থনৈতিক উন্নয়নসূচিতে থাকবে উৎপাদন বৃদ্ধিকল্পে ঋণ ও অন্যান্য দ্রব্য সামগ্রীর সুষ্ঠু বিলি-বণ্টন ও ব্যবহার, ঋণ আদায়, মার্কেটিং ও সরবরাহ, মৎস্য ও কুটির শিল্পের প্রসার, শিল্প কারখানা স্থাপন ইত্যাদি। সমাজ কল্যাণমূলক কর্মসূচির অধীনে বয়স্ক শিক্ষা, পরিবার পরিকল্পনা, স্বাস্থ্য রক্ষা, অব্যবহৃত সম্পদের ব্যবহার, ভূমিহীনদের কর্ম ও আয়ের সংস্থান, ভিক্ষুকদের পুনর্বাসন ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা থাকতে পারে। এসব প্রকল্প বাসত্মবায়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ স্থানীয়ভাবে প্রয়োজনীয় তহবিল, কারিগরি জ্ঞান ও উপকরণ সরবরাহে সহায়তা এবং উপজেলা পর্যায়ের জাতিগঠনমূলক সংস্থার নানাবিধ সাহায্য সহায়তার সমন্বয় করতে পারে।
- ৫. প্রাথমিক সমিতিগুলো যাতে যোগ্যতার সাথে এবং সাধারণ সভ্যদের পূর্ণ আস্থা ও সহযোগিতা নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়ণ করতে পারে, তার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ সহযোগিতা ও উপদেশ প্রদান করতে পারে। বিশেষ করে যথাসময়ে কমিটির সভা ও সাধারণ সভা অনুষ্ঠান, যোগ্য ব্যক্তিদের দ্বারা নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠন, সমিতির হিসাব-নিকাশ সংরক্ষণ ও উপস্থাপন, ধন-সম্পদের ব্যবহার, মুনাফাবণ্টন, কাজের গাফিলতি ও দুর্নীতির প্রতিকার, কর্জ খেলাফী সভ্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ইত্যাদি ব্যাপারে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যকর তদারকীকরণে সহায়তা করতে পারে।
- সমিতি ও সভ্যদের বিভিন্নমুখী কর্মসূচি রূপায়নে নিষ্ঠা ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য ইউনিয়ন পরিষদ নিয়মিতভাবে সমিতির কর্মচারী, কর্মকর্তা ও সভ্যবৃন্দের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে সহায়তা করতে পারে। এতে গ্রামবাসীদের মধ্যে গ্রামোন্নয়নের জন্য আবশ্যকীয় নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনা-যোগ্যতা ও নিঃস্বার্থ কর্মোদ্যমের উন্মেষ ঘটবে।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
প্রশ্ন ১: সমবায় কি?
উত্তর: সমবেতভাবে অর্থাৎ একে অপরের সহযোগিতার ভিত্তিতে সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আর্থ সামাজিক উন্নয়নের জন্য একদল মানুষের যৌথ উদ্যোগ বা কর্মপ্রচেষ্টাকে সমবায় বলা হয়।
প্রশ্ন ২: সমবায়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কি?
উত্তর: ক্ষুদ্র সঞ্চয় ও শক্তিকে সংঘবদ্ধ করে যৌথ প্রচেষ্টার মাধ্যমে আর্থসামাজিক মুক্তি এনে দেওয়া সমবায়ের লক্ষ্য।
প্রশ্ন ৩: সমবায়ে ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব কি?
উত্তর:সমবায় গঠনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের কুটির শিল্প এবং সমবায় বিষয়ক স্ট্যান্ডিং কমিটি রয়েছে যা সমবায় সমিতি গঠনে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করে এবং সমবায় কার্যক্রম সম্প্রসারণে সহায়তা করে।